





শিক্ষার্থীদের বাকিতে খেতে দিয়ে বিপাকে পড়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের ক্যানটিনমালিক মো. শফিকুল ইসলাম। শুধুমাত্র গত ছয় মাসেই লাখ টাকার উপর বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। শিক্ষার্থীর বেশির ভাগই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলেও সংবাদমাধ্যমকে জানান তিনি।
দেশের প্রথম সারির এক গণমাধ্যমের কাছে আক্ষেপ করে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘তাদের অনেকবার বলেছি, আমার অনেক ঋণ আছে। ঋণ শোধ করতে পারলে শান্তি পাব। বকেয়ার টাকাটা দাও। এই গরিবের দিকে তাকাও। আমি তোমাদের সেবক। আমার বুকে লাথি মেরো না।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে যোগাযোগ করে জানা যায়, ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে ক্যানটিন পরিচালনা করছেন শফিকুল ইসলাম। এ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা তার কাছ থেকে ২০-২৫ লাখ টাকা বাকিতে খেয়ে আর পরিশোধ করেননি বলে দাবি করেন তিনি।
বাকিতে খাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী অভিযোগ করে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এখানকার ছাত্রলীগেরই ছেলেরা বাকি খেয়েছে। নন–পলিটিক্যাল ছেলে অল্প কয়েকটা হতে পারে। এখন আর পারছি না। তোমাদের কত টাকা বাকি দিতে হবে বলো। দেব আমি। কিন্তু তোমরা নিজেদের মতো করে বাকি খেয়ে টাকা পরিশোধ করছ না কেন, এটাই আমার কষ্ট।’
শফিকুল ইসলাম লেখাপড়া জানেন না। তাই কে কত টাকা বাকিতে খেয়েছেন, তাও অজানা। তবে বাকি লিখে রাখার জন্য তার খাতা রয়েছে। কে কত টাকা বাকিতে খেয়েছেন, তা শিক্ষার্থীরাই লিখে রাখেন। কয়েকজন শিক্ষার্থীকে দিয়ে তার তিনটি খাতা পড়িয়েছেন। এতে গত পাঁচ-ছয় মাসে বাকি পেয়েছেন এক লাখ টাকার বেশি।
শফিকুল ইসলাম বলেন, অনেক দিন ধরে টাকা চেয়েও পাচ্ছেন না। পরে রবিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে গিয়েছিলেন। তাদের পরামর্শে তিনি ক্যানটিনের কয়েক জায়গায় বাকি পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে নোটিশ ঝুলিয়ে দিয়েছেন।
নোটিশে লেখা রয়েছে, ‘বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না। আমার চলতে কষ্ট হয়, আমাকে ক্যানটিন চালাতে সহযোগিতা করুন। বি.দ্র. বাকির খাতা পরিশোধ করুন। অনুরোধে, শফি ভাই।’
অনেকগুলো বাকির খাতা পুড়িয়ে ফেলেছেন দাবি করে শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রুনু ভাইও (ছাত্রলীগের বর্তমান সভাপতি) বলছেন, “শফি ভাই, আপনার তো ম্যালা লাখ টাকা শেষ করে দিয়েছে।” তো বললাম, “ওসব চলে গেছে। খাতা পুড়িয়ে ফেলেছি। এখন যেটা আছে, সেটার জন্য যদি একটু তদবির করেন, যা–ই উঠুক। ২০ হাজার, ২৫ হাজার উঠুক। তবু তো কিছু পেয়ে চালাতে পারব।” বর্তমান সময়ে জিনিসের অনেক দাম। আর পারছি না।
শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘চেষ্টা করি শিক্ষার্থীদের পাশে থাকতে। বর্তমানে জিনিসপত্রের প্রচুর দাম। তবু ক্যানটিনে কোনো খাবারের দাম বাড়াইনি। সবাইকে নিয়েই বাঁচতে চাই। এমন যেন না হয় যে আমাকে শেষ করে দিয়ে বাঁচবে। তোমরা শিক্ষিত ছেলে, তোমাদের কাছে কি আমি ভাত পাব না? আমি বাঁচতে চাই। আমার বউ ছেলেপেলে আছে।’