





ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রধান সংগঠন ছাত্রলীগের বহুল প্রতীক্ষিত জাতীয় সম্মেলন আগামীকাল। রাত পোহালেই কেন্দ্রীয় সম্মেলনে যোগ দিবেন সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ইস্যুতে ব্যাপক সমালোচিত জয়-লেখক কমিটির পর এবার আসছে নতুন এক নেতৃত্ব। তবে সেই নতুন নেতৃত্বে নতুন মুখ নিয়ে আছে নানা গুঞ্জন। সেই সাথে আলোচনায় আসছে নেতৃত্বের বয়সসীমা। উল্লেখ্য, নতুন এই কমিটিকেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জটিলতা সামাল দিতে হবে। তাই শুরু থেকেই এই সম্মেলনের দিকে চোখ থাকবে সাধারণ মানুষের।
ছাত্রলীগের নতুন এই সম্মেলন নিয়ে বেশ কদিন ধরেই সরগরম সংগঠনের আঁতুড়ঘর বলে স্বীকৃত মধুর ক্যান্টিন এবং রাজনৈতিক কেন্দ্র টিএসসি। পদপ্রত্যাশীদের অনেকেই জানান দিচ্ছেন নিজেদের অস্তিত্ব। অবশ্য, জনপ্রিয়তার বাইরেও আর্থিক লেনদেনও নতুন কমিটিতে বড় ভূমিকা রাখছে, এমনটাই বিশ্বাস করেন খোদ ছাত্রলীগ নেতারাও।

ছাত্রলীগের এবারের সম্মেলনের আগে আবারো মাথাচাড়া দিচ্ছে বয়সের ভূমিকা। গুঞ্জন আছে, নতুন কমিটিতে বয়সসীমা হতে পারে ২৯। এই বেশী বয়সের মারপ্যাঁচে আগের কমিটির পুরাতন নেতারাই আবারো সুযোগ পাবে বলে ধারণা অনেকের। এতে করে পদপ্রত্যাশী নতুন নেতাদের মাঝে কাজ করছে হতাশা। আর এমন অবস্থা কেবল কেন্দ্রীয় কমিটি ঘিরেই নয়। ছাত্রলীগের বিভিন্ন শাখায় এর প্রভাব পড়তে পারে বলে, সেখানেও বড় হচ্ছে নেতৃত্বকেন্দ্রীক হতাশা।
এর আগে, সংগঠনের ২৮তম সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হন যথাক্রমে সাইফুর রহমান সোহাগ ও এসএম জাকির হোসেন। ওই সম্মেলনে বয়স নির্ধারণ করা হয় ২৯ বছর। এরপর সর্বশেষ সম্মেলনে নেতৃত্বে আসেন রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং গোলাম রাব্বানী। সম্মেলনে তাদের বয়সসীমা ধরা হয় ২৮ বছর। যদিও পরবর্তী সময়ে সেটি আরও ১ বছর বাড়িয়ে অনূর্ধ্ব ২৯ বছর করা হয়।
এখন প্রশ্ন থেকেই যায়, ২৯ বছর পর্যন্ত ছাত্রত্ব কিভাবে টিকে থাকছে। বাংলাদেশের সাধারণ পড়াশোনার স্তর বিবেচনায় স্নাতোকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনায় একজন ছাত্রের ব্যয় হয় ২৬ থেকে ২৭ বছর। অথচ কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেতৃত্ব পেতে হলে আরও অন্তত দুই বছরের বেশি বয়স প্রয়োজন। যদিও ছাত্রলীগের মাঠ পর্যায়ে নিবেদিত কর্মীদের বয়স কারোরই ২৩ কিংবা ২৪ এর বেশি নয়। স্নাতক দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত ছাত্রদেরই মূলত মাঠে কাজ করতে দেখা যায়। তবে কেন্দ্রীয় কমিটি তো বটেই, নিজস্ব শাখা কমিটিতেও রীতিমতো উপেক্ষার শিকার এসব ছাত্র।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পর অনেক নিবেদিতপ্রাণ নেতাকেই রাজনীতির পাট চুকিয়ে ফেলতে হচ্ছে জীবিকার তাগিদে। দিনশেষে তাই আক্ষেপটাই সঙ্গী অনেকের জন্য। আবার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বিভিন্ন পর্যায়ে নানারকম অন্যায়ে জড়িত থেকে কিংবা ক্যাম্পাসে বেকার বসে থাকা অনেকেই নাম লেখাচ্ছেন ছাত্রলীগের কমিটিতে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশিরভাগ কমিটিতেই এমন নেতাকর্মীর সংখ্যাই প্রবল।
যদিও, ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় কমিটির প্রাথমিক সদস্য হতে হলে তার ছাত্রত্ব থাকতে হবে এবং বয়স অনূর্ধ্ব ২৭ বছর। এই শর্তে যে কেউ ছাত্রলীগের সদস্য হতে পারে। এই সময়ের মধ্যে কারও ছাত্রজীবনে ব্যত্যয় দেখা দিলে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদ তার সদস্যপদ বাতিল বা মেয়াদ পর্যন্ত বহাল রাখতে পারে। যদিও গঠনতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট এই নিয়মটি মানা হচ্ছে না।
গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২ বছর পরপর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তবে অধিকাংশ সময়ই এই নিয়মেরও ব্যত্যয় ঘটেছে। ফলে বেশ কয়েকটি কমিটি ২ বছরের বেশি সময় অতিবাহিত করেছে। ফলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী বয়সের ব্যাপারেও ছাড় দিতে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে কোনো কমিটির সময় এক বছর আবার কোনো কমিটির সময় ২ বছর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

এসব বিষয় কেন্দ্র করে, ছাত্রলীগের মনোনয়ন ফরমে কয়েকটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব নির্দেশনার মধ্যে রয়েছে ৬ ডিসেম্বর ২০২২ পর্যন্ত বয়সসীমা গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, অবিবাহিত হতে হবে, যেকোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত হতে হবে। এ ছাড়া কোনো মিথ্যা তথ্য প্রদান করলে তার আবেদনপত্র বাতিল হবে। অবশ্য, এসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই মনোনয়ন জমা দিয়েছেন অনেকেই।
ছাত্রলীগের একাধিক কর্মীর চাওয়া, সংগঠনের মূল গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৭ বছরেই যেন নেতৃত্বের বয়সসীমা বেঁধে দেয়া হয়। এতে করে তরুণ এসব কর্মীদের নেতৃত্বের মঞ্চে এগিয়ে আসা অনেকখানিই সহজ হবে। একইসাথে ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ‘ছাত্র’দের স্থানই নিশ্চিত হবে এমনটাই দাবি তাদের।