





‘স্বাধীনতা’! মানুষের জীবনে এই শব্দটির গুরুত্ব অনেক। মানুষ সহজাত ভাবেই স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায়। এই পৃথিবীতে যতশত যুদ্ধ, রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এর অধিকাংশই হয়েছে স্বাধীনতার জন্য।
দেশ স্বাধীন করার জন্য মানুষ যুদ্ধ করে। মূলত মানুষকে স্বাধীন করার জন্যই সেই যুদ্ধগুলো হয়। দেশের মূল ইলিমেন্ট তো এই মানুষই। ধর্মের স্বাধীনতার জন্য মানুষ যুদ্ধ করে।
এক দেশের সাথে আরেক দেশের যুদ্ধ হয়। জাতির সাথে জাতির। ধর্ম তো স্বাধীন। কিন্তু যেই মানুষ ধর্মকে পালন করবে তাদেরকে পরাধীন করে রাখা হয়।
অদ্ভুত বিষয় হল, ব্যাক্তি স্বাধীনতা, কথা বলার স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতার জন্য আমরা দেশের কাছে আবেদন করি। আকুতি জানাই। কখনো কখনো বিপ্লবও করি। কিন্তু আমাদের মানুষের বড় একটা অংশ তার ঘর, তার পরিবারের কাছেই এই বিষয়গুলোতে যুগ যুগ ধরে পরাধীন হয়ে থাকে। কিছুই বলার থাকে না। এই অধিকারের জন্য পরিবারের সাথে বিপ্লবও করা যায় না। এই যন্ত্রণা নিরবেই সহ্য করে নিতে হয়।
শিক্ষিত পরিবারের সন্তান মারুফ। সে নিজেও বর্তমানে মাস্টার্স করছে। তার পরিবার তথাকথিত আধুনিক। তারা যার যার মত করে বাঁচার স্বাধীনতা বুঝে, মানে। কিন্তু মারুফ যখন ধর্মীয় বিষয়গুলো গভীরভাবে বুঝতে পেরে সেভাবে চলতে চাচ্ছে তখনই তাদের ঘোর আপত্তি।
‘এটুকু বয়সে কেউ দাড়ি রাখে?’
‘প্যান্ট এখনই কেন টাখনুর উপর পরতে হবে?’
‘তুই কি বুড়ো হয়ে গেছিস?’
এক-দুইবার কথাগুলো মানা যায়। কিন্তু দিনের পর দিন এভাবে উপহাস করা, তাচ্ছিল্যের চোখে দেখা। মানুষটাকে সবার থেকে আলাদা করে দেয়াটা তার জন্য কত যন্ত্রণার এটা সেসব পরিবার একটুও উপলব্ধি করে না।
তাদের মেয়ে যেকোনো পোশাক, যেকোনো ভাবে চলাকে তারা নিরেট স্বাধীনতা হিসেবে দেখে। কিন্তু মারুফের স্বাধীন জীবনাচরণকে দেখে দৃষ্টিকটু হিসেবে। এই বৈষম্য কেন?
ঠিক এমনই একজন মেয়ে আয়েশা। তার পরিবারের কেউই পর্দা করে না। পর্দা বা হিজাব করাটাকে তারা একদম সেকেলে মনে করে। আয়েশা হিজাব করে এটা তাদের জন্য বিরক্তিকর। হিজাবে গরম লাগে আয়েশার কিন্তু ঘেমে একাকার হয়ে যায় তার পরিবার। এটা কেন?
‘তুই এত সুন্দর! হিজাব করলে তোর সুন্দর্য ঢাকা পড়ে যায়’
‘এই যুগের মেয়েরা হিজাব করে?’
এই টিপ্পনিগুলো দিনের পর দিন করেই যায় তারা!
একটাবারও ভাবে না তার যেমন পোশাক পরার স্বাধীনতা আছে। চুল কতটুকু কাটবে, কতটুকুইবা বের করে রাখবে সেই স্বাধীনতা আছে- ঠিক তেমন আয়েশার স্বাধীনতা আছে সে কতটা ঢেকে রাখবে। এই স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করাই একপ্রকার বর্বরতা, টর্চার!
অথচ দিনের পর দিন এই টর্চার করেও এরা নির্বিকার থাকে।
এরা আবার শিক্ষিত। এদের টাইমলাইন, ভাষণে, স্বাধীনতার বুলির ছড়াছড়ি। মাইক হাতে দিলে ঘন্টা চলে যাবে।
কিন্তু এরা জানে না পৃথিবী অসুন্দর হয় কিসে! পৃথিবী মারুফের দাড়ি কিংবা আয়েশার হিজাবে অসুন্দর হয় না। পৃথিবী অসুন্দর হচ্ছে তাদের এই দাঁড়ি আর হিজাব তথা ব্যাক্তি স্বাধীনতাকে দমিয়ে রাখার জন্য যেই নোংরা মনগুলো অপচেষ্টা চালায় সেসবের জন্য!
দাঁড়ি-হিজাব দেখা যায়। কিন্তু ঐ অন্ধকার মনগুলো দেখা যায় না। যদি দাঁড়ি-হিজাবের মত তাদের কালো মানসিকতাও দেখা যেতো তাহলে তারা কখনো নিজের চেহারা দেখার জন্য আয়নার সামনেও দাঁড়াতো না!
লেখক – মাসুদ মান্নান
সাংবাদিক ও কলামিস্ট