আগামীকাল বুধবার (৭ ডিসেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় অংশ নিতে কক্সবাজার সরকারি কলেজ শিক্ষার্থীদের একটি নির্দেশনা দিয়েছিল কলেজ প্রশাসন। গতকাল সোমবার (৫ ডিসেম্বর) দেওয়া নোটিশে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন স্বাক্ষর করেছেন। এতে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এ নির্দেশনার নোটিশটি মুহূর্তেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। পরে তীব্র সমালোচনার মুখে নির্দেশনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে কলেজ অধ্যক্ষ দাবি করেছেন— এমন নির্দেশনায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো বাধ্য-বাধকতা ছিল না। এটা তার একান্তই ব্যক্তিগত। পরে কলেজ প্রশাসনের পরামর্শেই এটি তুলে নেওয়া হয়েছে।
ওই নোটিশে বলা হয়েছে, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার কক্সবাজার আগামণ উপলক্ষে শেখ কামাল স্টেডিয়ামে আয়োজিত আগামী ০৭ ডিসেম্বর সকাল ১০টায় জনসভায় অংশগ্রহণের নির্দেশ দেয়া হল। এ জনসভায় কোন প্রকার ব্যাগ, কোন ধাতব বস্তু, মোবাইল ফোন ইত্যাদি বহন করা যাবে না বলেও বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করা হয়।
অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন ক্যাম্পাসভিত্তিক গণমাধ্যমকে বলেন, ‘নির্দেশনাটি দেওয়ার পর প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে— আমার এমন নির্দেশনা প্রশাসনকে উপস্থাপন করে। প্রশাসনের প্রতিক্রিয়ার পরপরই এই নির্দেশনা তুলে নেওয়া হয়েছে। এনিয়ে কলেজ প্রশাসনের পক্ষ থেকে নতুন একটি বিবৃতি দেওয়া হবে। সেখানে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে। নতুন বিবৃতিতে যথারীতি ক্লাস-পরীক্ষা চলমান থাকার কথা উল্লেখ করে দেবো।
এদিকে কলেজটির পক্ষ থেকে এমন নির্দেশনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এটা নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে নোটিশের ছবিটি শেয়ার করে লেখা হয়েছে, ‘আওয়ামী লীগ কি এতোটাই কর্মী সংকটে? স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দিয়ে সমাবেশ মাঠে জনসমর্থন দেখাতে হয়?’
প্রধানমন্ত্রীর জনভায় শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণের বিষয়ে দেওয়া নোটিশের বিষয়ে জানতে চাইলে কলেজ অধ্যক্ষ অধ্যাপক গিয়াস উদ্দিন বলেন, এটা সাধারণ একটি নোটিশ ছিল। নোটিশটি আমি সরলভাবে দিয়েছিলাম। কিন্তু এটা নিয়ে এতো বেশি আলোচনা-সমালোচনা হবে তা আমি বুঝতে পারিনি। পরে নোটিশটি তুলে নেওয়া হয়েছে। এখন আর শিক্ষার্থীদের ওপর ওই নোটিশের নির্দেশনা নেই।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন পর এখানে আসতেছেন। তিনি আমাদের প্রশাসনিক প্রধান। আমি চিন্তা করেছি, প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় উপস্থিত হলে আমার শিক্ষার্থীরা নতুন কিছু শিখতে পারবে। তাদের এ বিষয়গুলো জানাও দরকার। তবে এটা কোনো কলেজ প্রশাসনের নির্দেশনা ছিল না, আমার একান্ত ব্যক্তিগত নির্দেশনা ছিল।
অন্যদিকে চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর এক জনসভায় নিয়ে গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানের নোটিশ ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রতিষ্ঠানটির মানবসম্পদ বিভাগে সহকারী পরিচালক স্বাক্ষরিত ওই নোটিশে প্রতিষ্ঠানের সকল কর্মকর্তা কর্মচারীকে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। গত ২ ডিসেম্বর দেওয়া ওই নোটিশে বলা হয়, এতদ্বারা সকলের অবগতির জন্য জানানো যাইতেছে যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার চট্টগ্রামস্থ পলোগ্রাউন্ড মাঠে মহাসমাবেশে যোগদানের জন্য গোল্ডেন ইস্পাতের সকল শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বিশেষভাবে অনুরোধ করা হইল।
নোটিশে আরও বলা হয়, গোল্ডেন ইস্পাতের সকল শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাগণ মাননীয় পরিচালক জনাব সাইফুল আলম মহোদয়ের নেতৃত্বে মোস্তফা হাকিম কলেজ মাঠে একত্রিত হইয়া সভাস্থলে গমন করিবেন। সে লক্ষ্যে সকলকে আগামী ৪/১২/২০২২ রোববার সকাল ৯টার মধ্যে মোস্তফা হাকিম কলেজ মাঠে উপস্থিত থাকতে বলা হইল।
নোটিশে বলা হয়, যাহারা কারখানা হইতে যাইবেন তাহাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা থাকিবে। যাহারা শহরে অবস্থান করেন, তাহারা সরাসরি মোস্তফা হাকিম কলেজ মাঠে উপস্থিত থাকিবেন। সকলের জন্য সকালের নাস্তা ও দুপুরের খাবার ব্যবস্থা আছে।
নিচে নোটিশের নিচে লেখা হয়, বিষয়টি অতিব জরুরি।
তবে গোল্ডেন ইস্পাতের নোটিশটি ফেস দ্যা পিপলের পক্ষ থেকে নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা হয়নি। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় এটি উল্লেখ করা হয়েছে।