<figure><img class=”tie-appear” src=”https://i.imgur.com/op8E2Cp.jpg“></figure>
<figure><img class=”tie-appear” src=”https://i.imgur.com/op8E2Cp.jpg“></figure>
<figure><img class=”tie-appear” src=”https://i.imgur.com/op8E2Cp.jpg“></figure>
<figure><img class=”tie-appear” src=”https://i.imgur.com/op8E2Cp.jpg“></figure>
<figure><img class=”tie-appear” src=”https://i.imgur.com/op8E2Cp.jpg“></figure>
<figure><img class=”tie-appear” src=”https://i.imgur.com/op8E2Cp.jpg“></figure>
উত্তর আফ্রিকার সাগরপাড়ের দেশ মরক্কো। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে পশ্চিমের দেশ। দুই সাগরের দেশ বলেও পরিচিত। দেশটির পূর্বে আলজেরিয়া, উত্তরে ভূমধ্যসাগর ও স্পেন, পশ্চিমে আটলান্টিক মহাসাগর। মরক্কো ইউরোপের খুব কাছে, অথচ ইউরোপ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। মরক্কোর জনসংখ্যা তিন কোটি ৭৪ লাখের বেশি। এর প্রায় ৯৯ শতাংশ সুন্নি মুসলিম। বাকি ১ শতাংশের মধ্যে কিছু শিয়া অনুসারী এবং অন্যান্যদের মধ্যে রয়েছে খ্রিস্টান, ইহুদি এবং বাহাই ধর্মের মানুষ।
আরবি শব্দ মরক্কো অর্থ ‘পশ্চিমের রাজ্য’। এই অঞ্চল আল-মাঘরেব বা ‘দূরতম পশ্চিম’ নামে পরিচিত। মরক্কো নামটি এসেছে দেশটির আগের রাজধানী মারাক্কেশ থেকে। এর অর্থ স্রষ্টার দেশ। ২০১৬ সালে আওকাফ ও ইসলামিক বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, মরক্কোতে প্রায় ৪১ হাজার ৪৪৭টি মসজিদ রয়েছে; যার মধ্যে ১৬ হাজার ৪৮৯টিই জুমা মসজিদ। মরক্কোর বৃহত্তম শহর ক্যাসাব্ল্যাঙ্কায় অবস্থিত দ্বিতীয় হাসান মসজিদ আফ্রিকার বৃহত্তম এবং পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম মসজিদ।
খোলাফায়ে রাশেদার শাসনকাল শেষে ক্ষমতায় আসেন হজরত মুয়াবিয়া (রা.)। তিনি সমগ্র মুসলিম বিশ্বকে ১০টি প্রদেশে বিভক্ত করেন। প্রত্যেক প্রদেশের জন্য পৃথক পৃথক শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। তিনি মিসর ও উত্তর আফ্রিকার শাসনকর্তা হিসেবে যথাক্রমে হজরত আমর ইবনে আস ও হজরত উকবা বিন নাফেকে দায়িত্ব দেন।
এসময় রোমক শাসকরা আফ্রিকার অঞ্চলগুলো পুনর্দখল করে নেয়। অত্যাচার শুরু করে স্থানীয় বার্বার অধিবাসীদের প্রতি। ফলে তারা সাহায্যের জন্য নিকটবর্তী মিসরের শাসনকর্তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে। তখন মিসরের শাসনকর্তা আমর ইবনে আস হজরত মুয়াবিয়া (রা.)-কে এ ঘটনা জানান। ঘটনার বাস্তবতা শুনে চরম ব্যথিত হন হজরত মুয়াবিয়া (রা.)। তিনি সেনাপতি হজরত ওকবা ইবনে নাফের নেতৃত্বে ১০ হাজার সৈন্যের একটি শক্তিশালী বাহিনী আফ্রিকায় পাঠান। এই বাহিনী আফ্রিকাকে আরবদের করতলগত করেন। এর মাধ্যমে রোমানদের হটিয়ে সাহাবি হজরত মুআবিয়া (রা.)-এর শাসনামলে (৬৮৩ খ্রি.) সাহাবি উকবা ইবনে নাফে (রা.)-এর নেতৃত্বে মরক্কোয় ইসলামের আগমন ঘটে।
বৃহত্তর ইসলামি সাম্রাজ্যের অংশ হিসেবে মরক্কো প্রাথমিকভাবে ইফ্রিকিয়া প্রদেশ হিসাবে সংগঠিত হয় এবং ইসলামি সাম্রাজ্যের নির্ধারিত গভর্নর কর্তৃক শাসিত হয়। তখন থেকে আদিবাসী বার্বার উপজাতিরা ইসলাম গ্রহণ করতে শুরু করে। মরক্কো বিজয়ের পর মুসলমানরা কোনো স্থানীয় বার্বারকে ধর্মান্তরে বাধ্য করেনি। ইতিহাসের পাতায় মুসলিম কিংবা অমুসলিম কোনো সূত্রেই বার্বারদের জোরপূর্বক ধর্মান্তরের ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় না। গোটা আফ্রিকা মহাদেশজুড়ে ব্যাপক আকারে বার্বারদের ইসলাম গ্রহণ মুসলিম শক্তিকে দিয়েছে নতুন প্রাণ।
দীর্ঘ ১০০ বছরে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী ও কলোনিকে একত্র করে একটি রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। ইসলাম এখানে নিয়ে আসে উন্নত সংস্কৃতি ও উন্নত জীবনাচরণ। উন্নত আরবিয় সংস্কৃতিতে ছাপিয়ে যায় বার্বার আর যাযাবর জীবন।
১৬৬৬ সালে বর্তমান বাদশাহর পূর্বপুরুষরা আসার আগে কয়েক শ বছরে দেশটিতে নানা উত্থান-পতন হয়। আব্বাসি ও উমাইয়া খেলাফতের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন রাজত্বেরও উদ্ভব ঘটে। শেষের দিকে স্পেনে মুসলমানদের পতন প্রভাবিত করে দেশটিকে। খ্রিস্টান আগ্রাসনের কবলে পড়ে মরক্কো। আগ্রাসনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ১৬৬৬ সালে বর্তমান রাজবংশ (আলউতি রাজবংশ) দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। বর্তমান মরক্কোতে ঐতিহ্যের পাশাপাশি প্রগতির মেলবন্ধন তৈরি হয়েছে। আধুনিকতার সঙ্গে আধ্যাত্মিকতার মিশেল ঘটেছে। ইসলাম ও আধুনিকতার মহামিলনে সমৃদ্ধ এই দেশ। বিশ্বে প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয় মরক্কোতে। ৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে মরক্কোর ফেস শহরে প্রতিষ্ঠিত হয় আল-কারাউইন ইউনিভার্সিটি। এটি বিশ্বের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয়।
গত বছরগুলোতে মরক্কো এবং আলজেরিয়া উভয় দেশই তাদের সাবেক উপনিবেশিক শাসকদের ভাষার ওপর নির্ভরতা দূর করার উদ্যোগ নিয়েছে। এর প্রেক্ষিতে ফরাসির পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা চালু করার চেষ্টা করছে দেশ দুটির সরকার। সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের দেশ মরক্কো। দেশটি আরব লীগ, ওআইসি, গ্রুপ অব ৭৭ ইত্যাদি জোটের সদস্য। মরক্কো একমাত্র আফ্রিকান দেশ, যা আফ্রিকান ইউনিয়নের সদস্য নয়।
দেশটির সাংবিধানিক নাম দ্য কিংডম অব মরক্কো। রাজধানী রাবাত। আয়তন সাত লাখ ১১ হাজার বর্গকিলোমিটার। প্রধান ভাষা আরবি। পাশাপাশি সেখানে বারবার, ফ্রেঞ্চ ও স্প্যানিশ ভাষাও প্রচলিত। মরক্কো ১৬টি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত। এগুলোকে ৬২টি প্রদেশে ভাগ করা হয়েছে। দেশটিতে প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক। এটি শিক্ষাক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপ্লব। শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রগতির জন্য ইউনেসকো দেশটিকে ২০০৬ সালে পুরস্কৃত করে।
দেশটির মুদ্রার নাম মরোক্কান দিরহাম। প্রধান রপ্তানি খনিজ দ্রব্য, সামুদ্রিক মাছ থেকে তৈরি খাদ্য ও ফল। খ্রিস্টপূর্ব আট হাজার বছর আগে মরক্কোতে জনবসতি গড়ে ওঠে। তখন দেশটি অনুর্বর আর বৃষ্টিপাতহীন শুষ্ক মরুভূমি ছিল। বারবার, ফোনেশীয়, ইহুদি ও সাব-সাহারার লোকজন ক্রমান্বয়ে বসতি গড়ে এখানে। শুরু থেকেই বারবারদের প্রাধান্য ছিল। ফোনেশীয়রা ছিল বণিক জাতি, প্রাচীনকালে তারাও কিছুটা প্রাধান্য বিস্তার করে। ফলে রোমানদের আধিপত্য বৃদ্ধি পায়। একপর্যায়ে এটি রোমান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। পঞ্চম শতকে রোমানরা সরে গেলে পূর্ব জার্মান বংশোদ্ভূত ভেন্ডাল আর গ্রিক বাইজেন্টাইনরা পর্যায়ক্রমে দেশটি শাসন করে।
বিশ্বের বিখ্যাত মুসলিম পর্যটক ইবনে বতুতার জন্ম মরক্কোতে। তিনি সারাজীবন এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়িয়েছেন। পৃথিবী ভ্রমণের জন্যই তিনি মূলত বিখ্যাত হয়ে আছেন। একুশ বছর বয়স থেকে শুরু করে জীবনের পরবর্তী ৩০ বছরে তিনি প্রায় ৭৫ হাজার মাইল (১ লাখ ২১ হাজার কিমি) পথ পরিভ্রমণ করেছেন। তিনিই একমাত্র পরিব্রাজক যিনি তার সময়কার সমগ্র মুসলিম বিশ্ব ভ্রমণ করেছেন এবং তৎকালীন সুলতানদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তাঁর ভ্রমণকাহিনির বিখ্যাত গ্রন্থের নাম ‘আর রিহলা’।