18 C
New York
Wednesday, October 4, 2023

Buy now

spot_img

যে ১০ দফা দাবিতে চূড়ান্ত লড়াইয়ে নামবে বিএনপি

দীর্ঘদিন পর বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে মাঠে সরব রয়েছে দেশের প্রধান ও অন্যতম রাজনৈতিক দল বিএনপি। ক্ষমতাসীন সরকারের পদত্যাগ, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যে ঊর্ধ্বগতি, বিভিন্ন সময় আন্দোলনে নেতাকর্মীকে গুলি করে হত্যা, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠনই দলটির আন্দোলনের প্রধান কারণ। তবে এবার ১০ দফা দাবি নিয়ে মাঠে নামার কথা জানা গেছে।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির একাধিক নীতিনির্ধারক জানান, সরকারবিরোধী দলগুলোর সঙ্গে দুদফা সংলাপ করে যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে একমত হয়েছে বিএনপি। এজন্য ১০ দফা দাবি ইতোমধ্যে প্রায় চূড়ান্ত করা হয়েছে। শুধু স্থায়ী কমিটিতে অনুমোদনের অপেক্ষায়। যা ঢাকার গণসমাবেশে ঘোষণা করা হবে।

দাবিগুলো হচ্ছে-১. বর্তমান অনির্বাচিত অবৈধ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করে ভোটবিহীন, গণতন্ত্র হরণকারী, লুটেরা ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট সরকারের পদত্যাগ ২. ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ’-এর আলোকে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন ৩. নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ সরকার/অন্তর্বর্তীকালীন তত্ত্ববধায়ক সরকার বর্তমান অবৈধ নির্বাচন কমিশন বাতিল করে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন, উক্ত নির্বাচন কমিশন অবাধ নির্বাচনের অনিবার্য পূর্বশর্ত হিসাবে ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নিশ্চিত করতে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করা ৪. খালেদা জিয়াসহ সব বিরোধীদলীয় নেতাকর্মী, সাংবাদিক এবং আলেমদের সাজা বাতিল, সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও রাজনৈতিক কারাবন্দিদের অনতিবিলম্বে মুক্তি, দেশে সভা, সমাবেশ ও মত প্রকাশে কোনো বাধা সৃষ্টি না করা, সব দলকে স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনে প্রশাসন ও সরকারি দলের কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা বাধা সৃষ্টি না করা, স্বৈরাচারী কায়দায় বিরোধী কণ্ঠস্বরকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে নতুন কোনো মামলা ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করা ৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪সহ মৌলিক মানবাধিকার হরণকারী সব কালা-কানুন বাতিল করা

৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস ও পানিসহ জনসেবা খাতের মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল ৭. নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনা, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারকে সিন্ডিকেট মুক্ত করা ৮. গত ১৫ বছর ধরে বিদেশে অর্থ পাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করতে একটি কমিশন গঠন/দুর্নীতি চিহ্নিত করে অতি দ্রুত যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ ৯. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার দ্রুত বিচারের ব্যবস্থা করে যথাযথ শাস্থি নিশ্চিত, ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর, উপাসনালয় ভাঙচুর এবং সম্পত্তি দখলের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা করা ১০. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেওয়া।

রাষ্ট্র সংস্কারের ২৭ দফা রূপরেখা
সূত্রমতে, রাষ্ট্রের সার্বিক মেরামতে ২৭ দফার রূপরেখার খসড়া চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। রূপরেখার সূচনায় বলা হয়েছে, বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার বাংলাদেশ রাষ্ট্র কাঠামোকে ভেঙে চুরমার করে ফেলেছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামত ও পুনর্গঠন করতে হবে। দেশের জনগণের হাতেই দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে জয়লাভের পর বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার হটানোর আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর সমন্বয়ে ‘জনকল্যাণমূলক জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেই জাতীয় সরকার ২৭ দফা সংস্কারমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

দফাগুলো হলো-সংবিধান সংস্কার কমিশন গঠন; জাতীয় সমঝোতা কমিশন গঠন; নির্বাচনকালীন দলনিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন; সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ সংশোধন; রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী ক্ষমতার ভারসাম্য আনয়ন; দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা প্রবর্তন; নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন সংশোধন; জুডিশিয়াল কমিশন গঠন; প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন, মিডিয়া কমিশন; ন্যায়পাল নিয়োগ; গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড; নির্যাতনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িতদের বিচার।

অর্থনৈতিক সংস্কার কমিশন; ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার-মূলনীতির ভিত্তিতে ধর্ম পালনে পূর্ণ অধিকার ও পূর্ণ নিরাপত্তা বিধান; আঞ্চলিক বৈষম্য দূরীকরণ ও সুষম উন্নয়নে বিশেষ কর্মসূচি; বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ খাতে দায়মুক্তি আইনসহ সব কালাকানুন বাতিল ও অপ্রয়োজনীয় কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে ক্রয় বন্ধ। বৈদেশিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে জাতীয় স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেওয়া; দেশের সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় প্রতিরক্ষা বাহিনীকে সুসংগঠিত; যুগোপযোগী ও দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত করা; ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে স্থানীয় সরকারগুলোকে অধিকার স্বাধীন ও শক্তিশালী করা; নিবিড় জরিপের ভিত্তিতে মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের তালিকা প্রণয়ন ও যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া; আধুনিক ও যুগোপযোগী যুব উন্নয়ন নীতিমালা প্রণয়ন; নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে সুনির্দিষ্ট কর্মসূচি নেওয়া।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিরাজমান নৈরাজ্য দূর করেনি ও মধ্য পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা ও উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা-কারিকুলামকে প্রাধান্যসহ জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ; ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’-এ নীতির ভিত্তিতে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা প্রবর্তন ও জিডিপির ৫ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ, শ্রমিকদের প্রাইস-ইনডেক্স বেজড ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করা ও শিশুশ্রম বন্ধ করা এবং কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
3,878FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles